বুধবার ২৯ জানুয়ারী ২০২৫ - ২১:৪৭
'মদিনা থেকে কারবালা- ইমাম হুসাইন (আ.)’র আধ্যাত্মিক সফর

হাওজা / ২৮শে রজব, আজকের এই দিনে শুরু হওয়া মদিনা থেকে কারবালার দিকে ইমাম হুসাইন (আ.)’র সফর ছিল একটি আধ্যাত্মিক সফর।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: পর্ব ২-

উযাইবুল হাজানাত:

সোমবার, ২৮শে জিলহজ্ব, ৬০ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আ.) উযাইবুল হাজানাত নামক স্থানে পৌছান। সেখানে কুফার কয়েকজন লোক তাঁর সাথে সাক্ষাত করে এবং কুফার অবস্থা সম্পর্কে ইমাম (আ.) কে অবগত করে। তারা বলে, কুফার অভিজাত সম্প্রদায়ের লোকেরা উৎকোচ গ্রহণ করেছে এবং শত্রু পক্ষের হয়ে কাজ করছে এবং অবশিষ্ট লোকদের অন্তর আপনার সাথে কিন্তু প্রয়োজনে তারা আপনার বিরূদ্ধে তরবারি ধরতে দ্বিধাবোধ করবে না।

কাসরে বনী মুকাতেল:

বুধবার, ১লা মহরম, ৬১ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আ.) কাসরে বনী মুকাতেল নামক স্থানে পৌছান। এখানে কুফার কিছু লোক তাবুতে অবস্থান করছিল। ইমাম (আ.) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন তোমরা কি আমাকে সাহায্যে করার জন্য অপেক্ষা করছ? তাদের মধ্যে কিছু লোক বলে আমাদের অন্তর আপনার সাথে কিন্তু আমরা অপারগ কেননা আমাদের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে, আমাদের কাছে বিভিন্ন লোকদের সম্পদ গচ্ছিত রয়েছে এবং আমরা এর পরিণাম সম্পর্কেও অবগত না সুতরাং আমরা আপনাকে সাহায্যে করতে পারব না।

ইমাম (আ.) বনী হাশিমের যুবকদের বলেন, তারা যেন যথেষ্ট পরিমাণে পানি সংগ্রহ করে এবং আজ রাতেই আমরা এখান থেকে চলে যাব।

তারপর তিনি উবাইদুল্লাহ বিন জোয়ফি নামক ব্যাক্তিকে বলেন, যেহেতু তোমরা আমাকে সাহায্যে করবে না সেহেতু তোমরা খোদাকে ভয় কর এবং এখান থেকে এত দূরে চলে যাও যেন আমার সাহায্যের আহবান তোমাদের কানে না পৌঁছায়। কেননা যদি কেউ আমার শব্দ শুনতে পায় এবং আমার সাহায্যের জন্য এগিয়ে না আসে তাহলে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।

নাইনাওয়া:

বৃহঃস্পতিবার, ২রা মহরম, ৬১ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আ.) নাইনাওয়া নামক স্থানে পৌছান। এখানে হুর নির্দেশ প্রাপ্ত হয় যে ইমাম (আ.) কে মরুপ্রান্তরে সৈন্যবেষ্টি করে রাখা হয়। ইমাম (আ.) তখন এক উপযুক্ত আর্দ্রতাযুক্ত স্থান খুঁজতে থাকেন এবং এমন এক স্থানে পৌছান এবং সে স্থানের নাম জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন সে স্থানটির নাম হচ্ছে কারবালা। তখন তিনি ক্রন্দন করেন এবং বলেন, সবাই নেমে আসো কেননা এটাই হচ্ছে সে স্থান যেখানে আমাদের শহীদ করা হবে এবং এখানে আমাদের কবরস্থান হবে এবং রাসুল (সা.) আমাকে এ স্থানই দেখিয়ে ছিলেন।

উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ ইমাম হুসাইন (আ.)’কে চিঠি লিখে জানায় যে- হয় আপনি এজিদের বাইয়াত করুন অথবা নাহয় এখানেই হত্যা করা হবে। ইমাম তার চিঠি পড়ে বলেন, তোমার জন্য খোদার আযাব নির্ধরিত হয়ে গেছে।

কারবালা:

শুক্রবার, ৩রা মহরম, ৬১ হিজরীতে ওমর বিন সাআদ চার হাজার সৈন্য সহ কারবালাতে উপস্থিত হয়।

কারবালা:

শনিবার, ৪ঠা মহরম, ৬১ হিজরীতে উবাইদুল্লাহ কুফার মসজিদে তার বক্তব্যে বলে, হে কুফাবাসী! তোমরা আবু সুফিয়ানের বংশধরদেরকে চিনতে পেরেছ তারা যা চায় তা-ই করতে পারে!! এজিদকে চিনতে পেরেছ, সে চাইলে তোমাদেরকে ক্ষমাও করতে পারে। সে আমাকে নির্দেশ দিয়েছে আমি তোমাদেরকে অর্থ দান করি যেন তোমরা হুসাইনের সাথে যুদ্ধ করতে যাও।

– শিমর চার হাজার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সৈন্য বাহিনী

– ইয়াযিদ বিন রেকাব দুই হাজার সৈন্য

– হাসিন বিন নুমাইর চার হাজার সৈন্য

– মাযায়ের বিন রাহিয়ে চার হাজার সৈন্য

– নাসর বিন হারসা দুই হাজার সৈন্য নিয়ে কারবালার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

কারবালা:

রবিবার, ৫ই মহরম, ৬১ হিজরীতে কুফা শহরে বিভিন্ন স্থান থেকে ওমর বিন সাআদের সৈন্য দলে যোগ দেয়ার জন্য লোকেরা জমা হতে থাকে। উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ কারবালার পথে কিছু লোককে তদারকির দ্বায়িত্ব দিয়ে রাখে যেন কেউ ইমাম হুসাইন (আ.) এর সাহায্যের জন্য কারবালাতে যেতে না পারে।

কারবালা:

সোমবার, ৬ই মহরম, ৬১ হিজরীতে ওমরে সাআদ উবাইদুল্লাহকে চিঠি লিখে সাবধানে থাকতে বলে।

হাবীব ইবনে মাযাহির ইমাম (আ.) এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বনী আসাদ গোত্রের কাছে যায়। যারা কারবালার কাছেই জীবন যাপন করতো। তাদের কাছে সাহায্যে চাইলে প্রায় ৯০ জন ইমাম (আ.) সাহায্যে করতে প্রস্তুত হয়। কিন্তু পথিমধ্যে তারা ওমরে সাআদের সৈন্য দলের সম্মুখিন হয়। শত্রুরা তাদের উপরে হামলা করে এবং তারা বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যায়। হাবীব ইবনে মাযাহির উক্ত ঘটনা সম্পর্কে ইমাম (আ.) কে অবগত করলে তিনি বলেন, (لا حَولَ وَلا قُوَّةَ اِلاّ بِاللهِ) ।

ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর ভাই মোহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া এবং বণী হাশিমদেরকে চিঠি লিখেন।

ইমাম বাহিনীর ডান দিকের সৈন্য বাহিনীর প্রধান ছিলেন যোহাইর বিন কাইন, বাম দিকের সৈন্য বাহিনীর প্রধান ছিলেন হাবীব ইবনে মাযাহির এবং পতাকাবাহি ছিলেন হজরত আব্বাস (আ.)। যদিও এজিদি সৈন্য কাহিনী ইমাম (আ.) এর তাবুর কাছাকাছি ছিল কিন্তু ইমাম তাদের উপরে আগে হামলা করেননি। তিনি চেয়েছিলেন যে হামলা যেন আগে তাদের পক্ষ থেকে হোক।

কারবালা:

মঙ্গলবার, ৭ই মহরম, ৬১ হিজরীতে বণই উমাইয়ার প্রায় ৩০ হাজার সৈন্য বাহিনী ইমাম হুসাইন (আ.) এর সাথে যুদ্ধের জন্য আসে।

উবাইদুল্লাহ ওমরে সাআদকে নির্দেশ দেয় যে, ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্য ফুরাত নদীর পানিকে বন্ধ করে দাও। যেন এক বিন্দু পানি তার তাবুতে না পৌছায় যেমনভাবে উসমানের জন্য পানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল!

ওমরে সাআদ ৫০০ অশ্বারোহিকে ফুরাত কিনারাতে অবস্থানের নির্দেশ দেয়। তাদের মধ্যে একজন বলে হে হুসাইন! তোমাকে এক বিন্দু পানি দেয়া হবে না তুমি তৃষ্ঞার্ত অবস্থায় মারা যাবে। ইমাম (আ.) তাকে বদদোয়া দেয় যে, সে যেন পানি বিনা মারা যায়।...চলবে...

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha